আসসালামুয়ালাইকুম আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন
আজকে আমি আলোচনা করব কিভাবে একটি ভালো ক্যামেরা ফোন সিলেক্ট করবেন।
মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন এখন শুধু কথার কথা বলার জন্যই ব্যবহার হয় না বরং গান শোনা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, মিডিয়া কন্সাম্পশন, ছবি তোলা ইত্যাদি কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই যেসকল বিষয়গুলোর উপর জোর দিয়ে সাধারণত আমরা ফোন নির্বাচন করি তার মধ্যে ক্যামেরা অন্যতম।
আমরা যারা ভাল ক্যামেরার ফোন কিনতে চাই তাদের অনেকেই জানি না ক্যামেরার কি কি বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ফলে, দামী ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবির মান তুলনামূলক কম দামী ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবির তুলনায় খারাপ হলে আমরা অবাক হয়ে যাই। কেন এমন হয় সেসব বিষয় একটু জানার চেষ্টা করব।
ক্যামেরা সেন্সর
একটা ভাল ক্যামেরার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর সেন্সর। যে ফোনের সেন্সর যত বড় সেই সেন্সরের ক্যামেরায় ছবির মানও ভাল হবে। স্মার্টফোনে সাধারণত 1/3.2, 1/3, 1/2.55, 1/2.25 ইঞ্চির সেন্সর ব্যবহৃত হয়। ক্যামেরার সেন্সর যত নিচের দিকে থাকবে সেই সেন্সর তত বড়। যেমন, 1/2.25 ইঞ্চির সেন্সর উল্লেখিত বাকি সেন্সরগুলোর চেয়ে বড়।
আমাদের ফোনগুলোতে সাধারণত সনি এবং স্যামসাংয়ের সেন্সর ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এর মধ্যে সনির সেন্সর তুলনামূলক ভাল ফলাফল দেয়। অনেক ফোনের স্পেসিফিকেশনে সেন্সর সাইজ লেখা থাকে না। তাই ফোনের সেন্সর সাইজ সম্পর্কে জানতে www.devicespecifications.com ওয়েবসাইটে গিয়ে ফোনের মডেল লিখে সার্চ করলেই সেন্সর সাইজসহ ফোনের বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
ক্যামেরা অ্যাপারচার ( Aperture )
সেন্সরের পর আসছে অ্যাপারচার। ধরুন দুটি দরজা, একটি বড় এবং অপরটি ছোট। দুটি দরজা খুলে দিলে স্বাভাবিকভাবে বড় দরজা থেকে বেশি আলো পাওয়া যাবে। অ্যাপারচারও অনেকটা সেরকম। যে ক্যামেরার অ্যাপারচার যত বড় সেই ক্যামেরা তত বেশি আলো গ্রহণ করতে পারবে। ফলে ছবির মান ভাল হবে। স্মার্টফোনে সাধারণত f/2.1, f/1.8, f/1.7, f/1.4 মানের অ্যাপারচার ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরার অ্যাপারচার যত নিচের দিকে থাকবে অর্থাৎ, f/2.1, f/1.8 এর চেয়ে f/1.4 কিংবা f/1.7 অ্যাাপারচারবিশিষ্ট ক্যামেরা কম আলোতে ভাল ছবি দিবে।
এবার জানা যাক OIS বা Optical Image Stabilization এবং EIS বা Electronic Image Stabilization সম্পর্কে। এটি সাধারণত ছবি স্ট্যাবিলাইজেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। OIS এবং EIS এর মধ্যে OIS ভাল কারণ এটি ছবি বা ভিডিও করার সময় হাত নড়লে OIS প্রযুক্তি ক্যামেরাকে স্থির রাখে। ফলে নড়াচড়া করার কারণে ছবি বা ভিডিও ঝাপসা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অপরদিকে EIS প্রযুক্তি ছবি বা ভিডিওর ঝাপসা অংশ crop করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে কারেকশন করে। ফলে সেই ছবি বা ভিডিওর মান OIS এর মতো ভাল হয় না।
Optical Zoom এবং Digital Zoom ক্যামেরার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। Optical Zoom এর মাধ্যমে মানের কোন পরিবর্তন না এনেই ছবিকে Zoom করা হয়। কিন্তু Digital Zoom ছবিকে crop করে Zoom করে। ফলে Digital Zoom এর ছবি Optical Zoom এ তোলা ছবির চেয়ে খারাপ হয়।
এছাড়াও ছবির আলোর সমতা আনতে HDR বা High Dynamic Range, ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা করে ছবির সাবজেক্টকে ফোকাসের জন্য Bokeh Mode, কৃত্রিমভাবে রাতের তোলা ছবির আলো স্বল্পতা দূর করার জন্য Night Mode ইত্যাদি ফিচার ছবির মানকে উন্নত করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রেজুলুশন। রেজুলুশন হচ্ছে ছবির আকার। অর্থাৎ, যে ক্যামেরার পিক্সেল যত বেশি হবে সেই ক্যামেরায় তত বড় ছবি তোলা সম্ভব। যেমন, ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার ১৩ মিলিয়ন পিক্সেল থাকে এবং ২০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায় ২০ মিলিয়ন পিক্সেল থাকে, সুতরাং ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার চেয়ে ২০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায় তোলা ছবি বড় এবং ভাল হবে।
বর্তমানে বাজারে ৩২, ৪৮, এমনকি ৬৪ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ফোন পাওয়া যাচ্ছে, যা বাস্তবিক অর্থে প্রয়োজন নেই।
আশা করি এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলে আপনারা সহজেই একটি ভালো ক্যামেরা নির্বাচন করতে পারবেন।